স্মৃতিকাহন লেখায় বেশ টান অনুভব করছি: হাসান আজিজুল হক
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
হাসান আজিজুল হক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক। ছোটগল্পের যুবরাজ হিসেবেও তিনি খ্যাত। লিখে চলেছেন ছয় দশক ধরে। কেবল গল্প লিখেও যে লেখক হিসেবে নিজের অবস্থান শক্ত করা যায় এবং সাহিত্যে স্থায়ী আসন নেওয়া যায়, তিনি তাঁর উজ্জ্বল উদাহরণ।
লেখালেখিতে যেমন পাওয়া যায় একজন কুশলী গদ্যকার ও নির্মোহ বর্ণনাশৈলীর হাসান আজিজুল হককে, তেমনি তাঁর অসংখ্য সাহিত্যভাষণ ও সাক্ষাৎকারেও দেখা মেলে একজন তুখোড় আড্ডাবাজ ও হাস্যরসিক হাসান আজিজুল হকের। আজ থাকছে তাঁর সাক্ষাৎকার।
**: এখন কী পড়ছেন বা কোন কাজে সময় বেশি দিচ্ছেন?
হাসান আজিজুল হক : আমি সব সময়ই নতুন নতুন বিষয়ের ওপরে বই পড়তে পছন্দ করি। পছন্দটা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। নতুন বই না পেলে ভালো লাগে না। এ মুহূর্তে পড়ছি যে বইটি, সেটি একজন জাপানি লেখকের। বইটি আমার ছেলে এনেছে জাপান থেকে। বইটির কাহিনি গড়ে উঠেছে হিটলারের ইহুদি নিধন, নাৎসিদের অত্যাচার—এসব ঘটনা নিয়ে। আরেকটি মজার কাজ করছি এখন, সেটি হলো রক্তপাতহীন শুটিং করছি!
**: রক্তপাতহীন শুটিং মানে…?
হাসান আজিজুল হক : (অট্টহাসি হাসলেন হাসান আজিজুল হক) একদল লোক এসেছে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে। অনেক আগে আমি ‘মফস্বল মহানগর’ বিষয়ে লিখেছিলাম। তারা আমার সেই লেখাকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও ছবি বানাতে চায়। সে অনুযায়ী শুটিং চলছে। আমাদের বাংলাদেশের কিন্তু একটি বিশাল এলাকা মফস্বল। আর তার বাইরে মহানগর ঢাকা। এসব নিয়েই লেখাটি। এখন তারা তা নিয়েই একটি ভিডিও ফরম্যাটে কাজ করে যাচ্ছে। আমাকেও ক্যামেরার সামনে বসতে হবে। কথা বলতে হবে। এখনকার ব্যস্ততা তা নিয়েই।
** : এবার আমরা আপনার লেখালেখি প্রসঙ্গে কথা বলব…
হাসান আজিজুল হক : এসব নিয়ে আর কী বলব বলো! অনেক তো বলেছি। এখন বরং না লেখা নিয়ে বলা যায়। (আবারও হাসলেন তিনি)
** : আচ্ছা, তবে আমরা সেসব বিষয় নিয়েই কথা শুরু করি। অনেক দিন আপনি গল্প লিখছেন না। কিন্তু রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধ কিংবা বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। এটা কেন হচ্ছে?
হাসান আজিজুল হক : আমার মনে হয়, আমাদের সমাজে এখন একধরনের চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। নানা ধরনের সংকট দেখা যাচ্ছে। তাই নানা বিষয়ে কথা বলতে হচ্ছে। লিখতে হচ্ছে। এগুলো নিজের ভেতরকার তাগিদেই লিখতে বা বলতে হচ্ছে। তার ফলে এ জাতীয় লেখাগুলো এখন তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে। তা ছাড়া দীর্ঘকাল তো ছোটগল্পই লিখেছি। আরেকটি বিষয়, লেখক হিসেবে আমি যা করছি, সেটি জাবর কাটার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হচ্ছে। জাবর না কেটে নতুন কিছু দিতে পারছি কি না, সেটাও একটি বিষয়। যাতে আমার লেখাগুলোকে জাবর কাটা না বলা যায়, তাই লেখা থেকে বিরত থাকছি। অন্যভাবে বলতে পারি, একটি নতুন রাস্তা খুঁজছি আমি। এখন গত কয়েক বছর স্মৃতিকাহন লেখায় বেশ টান অনুভব করছি। তাই এখন লিখে চলেছি একের পর এক স্মৃতিকাহন।
**: আপনার দীর্ঘ ছয় দশকের লেখালেখির জীবনে উপন্যাস লিখেছেন কেবল দুটি—আগুন পাখি ও সাবিত্রী উপাখ্যান। গল্প নিয়েই কাটিয়ে দিলেন অনেকটা সময়। কেন?
হাসান আজিজুল হক: উপন্যাস আমি লিখতে চেয়েছি শুরু থেকেই। কিন্তু পারিনি বলেই গল্প লিখেছি। তবে একেবারেই যে চেষ্টা করিনি, তা নয়। ‘তরলা বালা এক বঙ্গ রমণীর কথা’ নামে একটি লেখা শুরু করেছিলাম। লিখেও ছিলাম অনেকটা। তার পরে আর আগ্রহ বোধ করিনি। তাই লিখে শেষ করা হয়নি।
**: এতটা সময় দিয়েছেন, সে জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
হাসান আজিজুল হক : তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ।সূত্রে:এনটিভি
প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ